Header Ads

Header ADS

আল-কুরআনের বিশেষ বিশেষ সুরার ফজিলত

সূরা ফাতিহার ফজিলতঃ
সাহাবি আবু সাইদ ইবনে মুআল্লা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছেনঃ-
আমি তোমাকে কুরআনের একটি সুমহান সূরা শিখাব সেটা হলো সূরা আল ফাতেহা যার প্রথমাংশ আল-হামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন এটা সাবউল মাসানী বা সাতটি প্রশংসাযুক্ত আয়াত এবং এক মহান কুরআন যা আমাকে দান করা হয়েছে (সহীহ বুখারী)
আবু সাইদ রাফেইবনে মুআল্লা (রাঃ) হতে বর্নিত, তিনি বলেন, একদা রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আমাকে বললেন, “মসজিদ থেকে বের হবার পূর্বেই তোমাকে কি কুরআনের সব চেয়ে বড় (মাহাত্ম্যপূর্ণ) সূরা শিখিয়ে দেব না? এই সাথে তিনি আমার হাত ধরলেন অতঃপর যখন আমরা বাহিরে যাওয়ার ইচ্ছা করলাম, তখন আমি নিবেদন করলাম, “ইয়া রাসুলুল্লাহ (সাঃ)! আপনি যে আমাকে বললেন তোমাকে অবশ্যই কুরআনের সব চেয়ে বড় (মাহাত্ম্যপূর্ণ) সূরা শিখিয়ে দেব?” সুতরাং তিনি বললেন, “(তা হচ্ছে) “আলহামদু লিল্লাহি রব্বিল লামিন” (সূরা ফাতেহা) এটি হচ্ছেসাবউ মাসানি (অর্থাৎ নামাযে বারংবার পঠিতব্য সপ্ত আয়াত ) এবং মহা কুরআন; যা আমাকে দান করা হয়েছে  [সহীহ বুখারি]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ-
যে ব্যক্তি সূরা ফাতেহা পাঠ করল না, তার সালাত শুদ্ধ নয় [মুত্তাফাকুন আলাইহি]
আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে ব্যক্তি সালাত আদায় করল, কিন্তু সূরা ফাতেহা পাঠ করল না, তার সালাত ত্রটিপূর্ণ তিনি কথাটি তিনবার বলেছেনতখন আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু কে জিজ্ঞাসা করা হল, আমরা তো ইমামের পিছনে থাকি ? তিনি বললেন, মনে মনে পড়বে[মুসলিম]
সাহাবি আবু সাইদ ইবনে মুআল্লা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছেন:
আমি তোমাকে কুরআনের একটি সুমহান সূরা শিখাব সেটা হলো সূরা আল ফাতেহা যার প্রথমাংশ আল-হামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন এটা সাবউল মাসানী বা সাতটি প্রশংসাযুক্ত আয়াত এবং এক মহান কুরআন যা আমাকে দান করা হয়েছে

সুরা বাক্বারার ফজিলতঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- “তোমরা দুটি যাহরাবীন তথা পুষ্প পাঠ কর, যথা সূরা আল-বাকারা সূরা আলে ইমরান কারণ দুটি সূরা কেয়ামতের দিন মেঘমালার মত অথবা দুদল পাখির ঝাঁকের ন্যায় সারিবদ্ধভাবে উড়বে এরা উভয়ে পাঠকের পক্ষ গ্রহণ করবে তোমরা সূরা বাকারা পাঠ কর কারণ তার পাঠ করা বরকতের কারণ, তার পাঠ ত্যাগ করা হতাশা অলসরা তা করতে পারবে না মুআবিয়া বলেন, আমার শ্রত হয়েছে যে, বাতালার অর্থ জাদু [মুসলিম]
আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- যে ঘরে সূরা আল-বাকারা তিলাওয়াত করা হয়, সে ঘরে শয়তান প্রবেশ করে না[মুসলিম]
প্রতিদিন রাতের বেলা ঘুমানোর আগে সুরা বাকারার শেষ দুটি আয়াত (২৮৫ + ২৮৬, আমানার-রাসুলু... থেকে শেষ পর্যন্ত) তেলাওয়াত করার অনেক ফযীলতের কথা সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে শেষ আয়াতে অত্যন্ত জরুরি কয়েকটি দুয়া রয়েছে এসব দুয়া কবুল হওয়ার ওয়াদাও করা হয়েছে
আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাদিআল্লাহু আনহু বলেনঃ জিব্রীল আলাইহিসসালাম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট থাকা অবস্থায় বলেন, দেখুন, এটা আকাশের একটি দরজা যা এই মাত্র খোলা হল ইতিপূর্বে কখনো তা খোলা হয়নি বর্ণনাকারী বলেন, এরপর দরজা দিয়ে একজন ফেরেশতা রাসূলের নিকট এসে বললেন, আপনি দুটি নূরের সুসংবাদ গ্রহণ করুন, যা আপনার পূর্বে কোন নবিকে দেয়া হয়নি সেটা হল, সূরা ফাতেহা সূরা বাকারার শেষ আয়াতগুলোর সুসংবাদ আপনি দুটো তিলাওয়াত করে যে কোন হরফ দ্বারা যা চাইবেন, তা আপনাকে দেয়া হবে (সহীহ মুসলিম
প্রিয় নবীজী (সাঃ) একদিন বললেন, “এই মাত্র আকাশের একটি দরজা খোলা হয়েছে এর আগে কখনও দরজাটি খোলা হয়নি, দরজা দিয়ে একজন ফেরেশতা অবতরণ করছেন এর আগে তিনি কখনও পৃথিবীতে অবতরণ করেননি ফেরেশতা রাসুলুল্লাহ(সাঃ) কে সালাম করে বলেন, সুসংবাদ গ্রহণ করুন আপাদমস্তক দুটি নূরের, যা আপনার আগে কোন নবীকে দেয়া হয়নিঃ
. ফাতেহাতুন কিতাব অর্থাৎ সুরা ফাতেহা এবং
. সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত
উভয় আয়াতে দোয়া আছে আল্লাহর উসিলা করে, আপনি এসব দোয়ার যে অংশই পাঠ করবেন আল্লাহ আপনাকে অবশ্যই রহমত দান করবেন অর্থাৎ কবুল করা হবে সহীহ মুসলিম
রাতের বেলা সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত তেলাওয়াত করলে তাহাজ্জুদের সমান সওয়াব পাওয়ার আশা করা যেতে পারেঃ
রাসুলুলাহ (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি রাতের বেলাসুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত পড়বে সেটা তার জন্য যথেষ্ঠ হবে বুখারি ৫০১০, মুসলিম ৮০৭
বিখ্যাত হাদীস গ্রন্থরিয়াদুস সালেহীনএর লেখক সহীহ মুসলিমের ভাষ্যকার, ইমাম আন-নববী (রহঃ) বলেন, “এর অর্থ কেউ বলেছেনঃ কিয়ামুল লাইল বা তাহাজ্জুদ নামাযের জন্য যথেষ্ঠ হবে কেউ বলেছেনঃ শয়তানের ক্ষতি থেকে বাঁচার জন্য যথেষ্ঠ হবে কেউ বলেছেনঃ বালা-মুসিবত থেকে নিরাপত্তা পাওয়া যাবে তবে সবগুলো অর্থ সঠিক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে শারহুন নববী লা সহিহ মুসলিমঃ /৩৪০, হাদীস ৮০৭
সহীহ বুখারীর ভাষ্যকার, আমিরুল মুমিনিন ফিল হাদীস, ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রহঃ) এই অভিমত সমর্থন করে বলেন, উপরের সবগুলো অর্থ নেওয়া সঠিক আল্লাহ ভালো জানেন
প্রথম অর্থটি (তাহাজ্জুদের সমান সওয়াব পাওয়া) আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে একটি মারফু হাদীসে স্পষ্ট উল্লেখ আছে ফাতহুল বারী /৬৭৩, হাদীস ৫০১০
কারণেই আলী (রাঃ) বলেন, “আমার মতে যার সামান্যও বুদ্ধিজ্ঞান আছে, সে দুটি আয়াত পাঠ করা ছাড়া নিদ্রা যাবে না মানাকিবুস সাহাবা ইমাম নববী এটাকে সহীহ বলেছেন, আল-আযকার
আবু মাসউদ (রাঃ) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, “যে ব্যক্তি সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত রাতে পাঠ করবে, তার জন্য দুটি আয়াত যথেষ্ট হবে (অর্থাৎ সারারাত সে জিন মানুষের অনিষ্ট থেকে নিরাপদ থাকবে এবং প্রতিটি অপ্রিয় বিষয় থেকে তাকে হেফাজত করা হবে) (সহীহ বুখারি, মুসলিম)
সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াতঃ
ءامَنَ الرَّسولُ بِما أُنزِلَ إِلَيهِ مِن رَبِّهِ وَالمُؤمِنونَ ۚ كُلٌّ ءامَنَ بِاللَّـهِ وَمَلـٰئِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ لا نُفَرِّقُ بَينَ أَحَدٍ مِن رُسُلِهِ ۚ وَقالوا سَمِعنا وَأَطَعنا ۖ غُفرانَكَ رَبَّنا وَإِلَيكَ المَصيرُ ﴿٢٨٥﴾ لا يُكَلِّفُ اللَّـهُ نَفسًا إِلّا وُسعَها ۚ لَها ما كَسَبَت وَعَلَيها مَا اكتَسَبَت ۗ رَبَّنا لا تُؤاخِذنا إِن نَسينا أَو أَخطَأنا ۚ رَبَّنا وَلا تَحمِل عَلَينا إِصرًا كَما حَمَلتَهُ عَلَى الَّذينَ مِن قَبلِنا ۚ رَبَّنا وَلا تُحَمِّلنا ما لا طاقَةَ لَنا بِهِ ۖ وَاعفُ عَنّا وَاغفِر لَنا وَارحَمنا ۚ أَنتَ مَولىٰنا فَانصُرنا عَلَى القَومِ الكـٰفِرينَ - 
-মানার রসুলু বিমা উনজিলা ইলাইহি মির রব্বিহী ওয়াল মুমিনুন, কুল্লুন -মানা বিল্লাহি ওয়া মালাইকাতিহি ওয়া কুতুবিহী ওয়া রসুলিহী লা নুফাররিকু বাইনা আহাদিম মির রাসুলিহ ওয়া-ক্বালু সামিনা ওয়াআত্বানা গুফরা-নাকা রব্বানা ওয়া ইলাইকাল মাসীর
লা ইয়কাল্লিফুল্লা-হু নাফসান ইল্লা উসআহা লাহা-মা কাসাবাত ওয়া আলাইহা মাকতাসাবাত, রব্বানা লা-তু -খিযনা ইন্নাসীনা আউ আখত্বানা, রব্বানা ওয়ালা তাহমিল আলাইনা ইসরান কামা হামালতাহু আলাল্লাযীনা মিন ক্বাবলিনা, রব্বানা ওয়ালা তুহাম্মিলনা মা-লা-ত্বা ক্বাতালানা-বিহী ওয়াফু আন্না,ওয়াগফির লানা ওয়ার হামনা আনতা মাওলানা ফানসুরনা আলাল ক্বাওমিল কাফিরীন
অর্থঃ রসূল বিশ্বাস রাখেন সমস্ত বিষয় সম্পর্কে যা তাঁর পালনকর্তার পক্ষ থেকে তাঁর কাছে অবতীর্ণ হয়েছে এবং মুসলমানরাও সবাই বিশ্বাস রাখে আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফেরেশতাদের প্রতি, তাঁর গ্রন্থসমুহের প্রতি এবং তাঁর পয়গম্বরগণের প্রতি তারা বলে আমরা তাঁর পয়গম্বরদের মধ্যে কোন তারতম্য করিনা তারা বলে, আমরা শুনেছি এবং কবুল করেছি আমরা তোমার ক্ষমা চাই, হে আমাদের পালনকর্তা তোমারই দিকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে
আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যাতীত কোন কাজের ভার দেন না, সে তাই পায় যা সে উপার্জন করে এবং তাই তার উপর বর্তায় যা সে করে হে আমাদের পালনকর্তা, যদি আমরা ভুলে যাই কিংবা ভুল করি, তবে আমাদেরকে অপরাধী করো না হে আমাদের পালনকর্তা! এবং আমাদের উপর এমন দায়িত্ব অর্পণ করো না, যেমন আমাদের পূর্ববর্তীদের উপর অর্পণ করেছ, হে আমাদের প্রভূ! এবং আমাদের দ্বারা বোঝা বহন করিও না, যা বহন করার শক্তি আমাদের নাই আমাদের পাপ মোচন কর আমাদেরকে ক্ষমা কর এবং আমাদের প্রতি দয়া কর তুমিই আমাদের প্রভু সুতরাং কাফের সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদের কে সাহায্যে কর

আয়াতুল কুরসীর ফজিলতঃ-
আয়াতুল কুরসী [সূরা আল-বাকারা, আয়াত ২৫৫ :
ٱللَّهُ لَآ إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ ٱلْحَىُّ ٱلْقَيُّومُ ۚ لَا تَأْخُذُهُۥ سِنَةٌۭ وَلَا نَوْمٌۭ ۚ لَّهُۥ مَا فِى ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَمَا فِى ٱلْأَرْضِ ۗ مَن ذَا ٱلَّذِى يَشْفَعُ عِندَهُۥٓ إِلَّا بِإِذْنِهِۦ ۚ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ ۖ وَلَا يُحِيطُونَ بِشَىْءٍۢ مِّنْ عِلْمِهِۦٓ إِلَّا بِمَا شَآءَ ۚ وَسِعَ كُرْسِيُّهُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضَ ۖ وَلَا يَـُٔودُهُۥ حِفْظُهُمَا ۚ وَهُوَ ٱلْعَلِىُّ ٱلْعَظِيمُ
উচ্চারণঃ আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল ক্বইয়্যুমু লা তাখুজুহু সিনাত্যু ওয়ালা নাউম লাহু মা ফিস ছামা-ওয়াতি ওয়ামা ফিল আরদ্ মান যাল্লাযী ইয়াস ফায়ুঈন দাহু ইল্লা বি ইজনিহি ইয়ালামু মা বাইনা আইদিহিম ওয়ামা খল ফাহুম ওয়ালা ইউ হিতুনা বিশাই ইম্ মিন ল্ মিহি ইল্লা বিমা শা ওয়াসিআকুরসিইউ হুস ছামা ওয়াতি ওয়াল আরদ্ ওয়ালা ইয়া উদুহু হিফজুহুমা ওয়াহুয়াল লিয়্যূল জীম
অনুবাদঃ আল্লাহ, তিনি ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই, তিনি চিরঞ্জীব, সুপ্রতিষ্ঠিত ধারক তাঁকে তন্দ্রা নিদ্রা স্পর্শ করে না তাঁর জন্যই আসমানসমূহে যা রয়েছে তা এবং যমীনে যা আছে তা কে সে, যে তাঁর নিকট সুপারিশ করবে তাঁর অনুমতি ছাড়া? তিনি জানেন যা আছে তাদের সামনে এবং যা আছে তাদের পেছনে আর তারা তাঁর জ্ঞানের সামান্য পরিমাণও আয়ত্ব করতে পারে না, তবে তিনি যা চান তা ছাড়া তাঁর কুরসী আসমানসমূহ যমীন পরিব্যাপ্ত করে আছে এবং দুটোর সংরক্ষণ তাঁর জন্য বোঝা হয় না আর তিনি সুউচ্চ, মহান
রাসুলুল্লাহ(সাঃ) বলেছেন,“যে ব্যক্তিপ্রত্যেক ফরয নামায শেষে আয়াতুল কুরসী পাঠ করে তার জন্য জান্নাতে প্রবেশ করারজন্য মৃত্যু ছাড়া আর কোন বাধা থাকে না সুনানেআন-নাসায়ীঃ ১০০, ইবনে সুন্নীঃ ১২১, শায়খ আলবানীর মতে সহীহ, সিলসিলা আস-সহীহাহঃ /৬৯৭   
রাসুলুল্লাহ(সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি সকালে আয়াতুল কুরসী পাঠ করবে তাকে সন্ধ্যা পর্যন্তজিনদের থেকে রক্ষা করা হবে আর, যে সন্ধ্যায় পাঠ করবে তাকে সকাল পর্যন্ত রক্ষা করা হবে সহীহ তারগীব ওয়াত-তারতীবঃ হা/৬৬২
আয়াতুল কুরসী শয়নকালে পাঠ করলে সকাল পর্যন্ত তার হেফাযতের জন্য একজন ফেরেশতা পাহারায় নিযু্ক্ত থাকে যাতে শয়তান তার নিকটবর্তী হতে না পারে সহীহ বুখারীঃ ২৩২১
উবাই ইবনে কা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “হে আবূ মুনযির! তুমি কি জান, মহান আল্লাহর গ্রন্থ (আল-কুরআন) এর ভিতর তোমার যা মুখস্থ আছে, তার মধ্যে সবচেয়ে বড় (মর্যাদাপূর্ণ) আয়াত কোনটি?” আমি বললাম, “সেটা হচ্ছে আয়াতুল কুরসী সুতরাং তিনি আমার বুকে চাপর মেরে বললেন, “আবুল মুনযির! তোমার জ্ঞান তোমাকে ধন্য করুক [মুসলিম]
(অর্থাৎ তুমি, নিজ জ্ঞানের বর্কতে উক্ত আয়াতটির সন্ধান পেয়েছ, সে জন্য তোমাকে ধন্যবাদ)
আবূ উমামা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: আল্লাহর রাসূল বলেছেন: যে ব্যক্তি প্রতি ফরয নামায শেষে আয়াতুল কুরসী পড়ে, তার জান্নাতে প্রবেশ করতে মৃত্যু ছাড়া কোন কিছু বাধা হবে না [সহীহ আল্ জামে]
হজরত আলী (রা.) বলেন, আমি রসূলুল্লাহকে (সা.) বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ সালাতের পর আয়াতুল কুরসি নিয়মিত পড়ে, তার জান্নাত প্রবেশে কেবল মৃত্যুই অন্তরায় হয়ে আছে [নাসাঈ]
যে ব্যক্তি শোয়ার সময় আয়াতুল কুরসী পড়বে শয়তান সারারাত তার নিকটে যাবেনা [বুখারী, মিশকাত]
আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বললেনঃ (একবার) রসূলুল্লাহ (সাঃ) আমাকে রমযানের যাকাত (ফিৎরার মাল-ধন) দেখাশোনা করার দায়িত্ব দেন বস্তুতঃ (আমি পাহারা দিচ্ছিলাম ইত্যবসরে) একজন আগমনকারী এসে আজঁলা ভরে (দুহাত ভরে) খাদ্যবস্তু নিতে লাগল আমি তাকে ধরলাম এবং বললাম, তোকে অবশ্যই রসূলুল্লাহ (সাঃ) এর কাছে পেশ করব; সে আবেদন করল, আমি একজন সত্যিকারের অভাবী পরিবারের ভরণপোষণের দায়িত্ব আমার উপর, আমার দারুন অভাব; কাজেই আমি তাকে ছেড়ে দিলামসকালে (রসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নিকট হাযির হলাম) রসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, হে আবূ হুরাইরা! গত রাতে তোমার বন্দী কী আচরন করেছে? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! সে তার অভাব (অসহায়) পরিবার-সন্তানের অভিযোগ জানাল সুতরাং তার প্রতি আমার দয়া হলে আমি তাকে ছেড়ে দিলাম; তিনি বললেন, সতর্ক থেকো, সে আবার আসবেআমি রসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর অনুরুপ উক্তি শুনে সুনিশ্চিত হলাম যে, সে আবার আসবে কাজেই আমি তার প্রতীক্ষায় থাকলাম সে (পুর্ববৎ) এসে আজঁলা ভরে খাদ্যবস্তু নিতে লাগল আমি বললাম, অবশ্যই তোকে রসূলুল্লাহ (সাঃ) এর কাছে পেশ করব; সে বলল, আমি অভাবী,পরিবারের দায়ত্ব আমার উপর, (আমাকে ছেড়ে দাও) আমি আর আসব না; সুতরাং আমার মনে দয়া হল আমি তাকে ছেড়ে দিলামসকালে উঠে (যখন রসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর কাছে গেলাম তখন) রসূলুল্লাহ (সাঃ) আমাকে বললেন, আবূ হুরাইরা! গত রাতে তোমার বন্দী কী আচারন করেছে? আমি বললাম, ইয়া রসূলুল্লাহ (সাঃ)! সে তার অভাব অসহায় সন্তানের-পরিবারের অভিযোগ জানাল সুতরাং আমার মনে দয়া হলে আমি তাকে ছেড়ে দিলাম”; তিনি বললেন, সতর্ক থেকো, সে আবার আসবেসুতরাং তৃতীয় বার তার প্রতীক্ষায় রইলাম সে (এসে) আজঁলা ভরে খাদ্যবস্তু নিতে লাগল আমি তাকে ধরে বললাম এবারে তোকে রসূলুল্লাহ (সাঃ) এর দরবারে হাযির করবই; এটা তিনবারের মধ্যে শেষবার ফিরে আসবো না বলে তুই আবার ফিরে এসেছিস; সে বলল তুমি আমাকে ছেড়ে দাও, আমি তোমাকে এমন কতকগুলি শব্দ শিখিয়ে দেব, যার দ্বারা আল্লাহ তোমার উপকার করবেন আমি বললাম সেগুলি কী? সে বললযখন তুমি (ঘুমাবার জন্য) বিছানায় যাবে, তখন আয়াতুল কুরসী পাঠ করে (ঘুমাবে); তাহলে তোমার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন রক্ষক নিযুক্ত হবে আর সকাল পর্যন্ত তোমার কাছে শয়তান আসতে পারবে না সুতরাং আমি তাকে ছেড়ে দিলামআবার সকালে (রসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর কাছে গেলাম); তিনি আমাকে বললেন, তোমার বন্দী কী আচারন করেছে? আমি বললাম, “হে আল্লাহর রাসূল! সে বলল, আমি তোমাকে এমন কতিপয় শব্দ শিখিয়ে দেব, যার দ্বারা আল্লাহ আমার কল্যাণ করবেন; বিধায় আমি তাকে ছেড়ে দিলাম; তিনি বললেন সে শব্দগুলি কী? আমি বললাম, সে আমাকে বলল, যখন তুমি বিছানাই (শোয়ার জন্য) যাবে, তখন আয়াতুল কুরসী শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ে নেবে; সে আমাকে আর বলল, তার কারনে আল্লাহর তরফ থেকে সর্বদা তোমার জন্য একজন রক্ষক নিযুক্ত থাকবে আর সকাল পর্যন্ত তোমার কাছে শয়তান আসতে পারবে না
( কথা শুনে) তিনি (সাঃ) বললেন, শোনো! সে নিজে ভীষণ মিথ্যাবাদী; কিন্তু তোমাকে সত্য কথা বলেছে হে আবূ হুরাইরা! তুমি জান, তিন রাত ধরে তুমি কার সাথে কথা বলছিলে?” আমি বললাম, জী না”; তিনি বললেন, সে ছিল শয়তান [সহীহ বুখারী]
সুরা মুলক
. প্রতিদিন (দিনে বা রাতে যেকোনো এক সময়)সুরা মুলক মুলক তেলাওয়াত করা গুরুত্বপূর্ণ একটি সুন্নতঃ অনেকে মনে করে, এটা রাতেই পড়তে হবে, এটা ঠিক না কেউ রাতেপড়লে ভালো তবে সুবিধামতো সময়ে দিনে রাতে যেকোনো সময়েই পড়া যাবে
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আলিফ লাম মীম তানজিলুল কিতাব (সুরা আস-সাজদা) তাবারাকাল্লাযী বিয়াদিহিল মুলকু (সুরা মুলক) তেলাওয়াত না করে কোনদিনঘুমাতেন না
সুনানে আত-তিরমিযী ২৮৯২, মুসনাদে আহমাদ ১৪২৯. শায়খআলবানীর মতে হাদীসটি সহীহ, সহীহ তিরমিযী /
এই সুরাটি নিয়মিত প্রতিদিন তেলাওয়াত করলে কবরের আজাব থেকেসুরক্ষা করবেঃ
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেছেনঃযে ব্যক্তি প্রতিদিনরাতের বেলা তাবারাকাল্লাযী বিয়াদিহিল মুলক (সুরা মুলক) তেলাওয়াত করবে আল্লাহ তাকেকবরের আজাব থেকে রক্ষা করবেন রাসুলুল্লাহ এর যামানায় এইসুরাটিকে আমরাআল-মাআনিয়াহবা সুরক্ষাকারী বলতাম যে রাতের বেলা এই সুরাটি পড়বে সেখুব ভালো একটা কাজ করলো
সুনানে আন-নাসায়ী /১৭৯. শায়খ আলবানীর মতে হাদীসটি হাসান সহীহ, সহীহ আত-তারগীব ওয়ালতারহীব ১৪৭৫
***এই সুরা প্রত্যেকদিন রাতের বেলা তেলাওয়াত করলে কিয়ামতের দিনশাফায়াত করে জান্নাতে নিয়ে যাবে ইন শাআল্লাহঃ
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃকুরআনে এমন একটা সুরা আছেযার মধ্যে ৩০টা আয়াত রয়েছে যেটা একজন ব্যক্তির জন্য সুপারিশ করবে এবং তাকে ক্ষমাকরে দেওয়া হবে আর সেটা হলো তাবারাকাল্লাযী বিয়াদিহিল মুলকু (সুরা মুলক)”
সুনানে আত-তিরমিযী ২৮৯১, সুনানে আবু দাউদ ১৪০০, মুসনাদের আহমাদ, ইবনে মাজাহ ৩৭৮৬
ইমাম তিরমিযী বলেছেন হাদীসটি হাসান, ইবনে তাইমিয়্যা বলেছেন সহীহমাজমু ২২/২২৭, শায়খ আলবানীর মতে হাদীসটি সহীহ, সহীহ তিরমিযী /, সহীহ ইবনে মাজাহ ৩০৫৩ 
বিঃদ্রঃ এইখানে তেলাওয়াত মানে শুধু তোতা পাখির মতো রিডিং পড়েযাওয়া না
এই প্রসংগে সউদী আরবের স্থায়ী ফতোয়া বোর্ডের আলেমদের ফতোয়া হচ্ছে,
এই হাদীসগুলোর আলোকে বলা যায়ঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টিরজন্য সুরা মুলক বিশ্বাস করবে তেলাওয়াত করবে, এই সুরাতে যে শিক্ষা দেওয়াআছে তা গ্রহণ করবে এবং যে হুকুম আহকাম দেওয়া আছে সেইগুলো মেনে চলবে কেয়ামতের দিনতার জন্য এই সুরাটি শাফায়াত করবে
ফতাওয়া আল-লাজনাহ আদ-দায়িমাহ /৩৩৩, ৩৩৫
. সুরা ইখলাস এর ফযীলতঃ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুরা ইখলাস সম্পর্কে বলেছেনঃ
নিঃসন্দেহে এটি কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমানমুসলিম ৮১২, তিরমিযী ২৮৯৯, ইবনু মাজাহ ৩৭৮৭, আহমাদ ৯২৫১
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবীগণকে বললেন, তোমরা কি এক রাতে এক তৃতীয়াংশকুরআন পড়তে পারনা? প্রস্তাবটিসাহাবাদের জন্য কঠিন মনে হল তাই তাঁরা বলে উঠলেন, হে আল্লাহর রসুল! এই কাজ আমাদের মধ্যে কেকরতে পারবে”? (অর্থাৎ কেউ পারবে না)
তিনি বললেন, ক্বুল হুওয়াল্লাহু আহাদ, আল্লাহুস স্বামাদ” (সুরা ইখলাস) কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমান (অর্থাৎ এই সুরা পড়লে এক তৃতীয়াংশ কুরআন পড়ার সমান নেকী পাওয়া যাবে)
সহীহুলবুখারী ৫০১৫, নাসায়ী ৯৯৫, আবু দাউদ ১৪৬১, আহমাদ ১০৬৬৯
এক সাহাবী এসে বলল, “হেআল্লাহর রসূল! আমি এই (সূরা) ক্বুল হুওয়াল্লাহু আহাদকে ভালবাসি. তিনি বললেন, “এর ভালবাসা তোমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে
বুখারীর৭৭৪নং হাদীসের পরবর্তী অধ্যায়, তিরমিযী ২৯০১, আহমাদ ১২০২৪
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
যে ব্যক্তি সুরা ইখলাস ১০ বার পাঠ করবে, তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর বানানো হবে
সহীহ আল-জামি আস-সগীর ৬৪৭২
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক ব্যক্তিকে সুরা ইখলাস তেলাওয়াত করতে শুনলেনতিনি বললেনএটা তার অধিকার. সাহাবারা জিজ্ঞাস করলেন, তার অধিকার কি? তিনি উত্তরদিলেন, তার অধিকার হচ্ছে জান্নাতমুসনাদে আহমাদঃ ৭৬৬৯

***
দিনে রাতে যতবার ইচ্ছা, বেশি বেশি করে সুরা ইখলাস পড়া যাবে
সূরা ইখলাস:
بِسْمِ ٱللَّهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ
قُلْ هُوَ ٱللَّهُ أَحَدٌ - ٱللَّهُ ٱلصَّمَدُ - لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ - وَلَمْ يَكُن لَّهُۥ كُفُوًا أَحَدٌۢ
উচ্চারণঃ কুল হু আল্লাহু আহাদ আল্লাহুছ ছামাদ লাম ইয়ালিদ ওয়া লাম ইউলাদওয়ালাম ইয়াকুল্লাহু কুফুয়ান আহাদ
অর্থঃ বলঃ তিনিই আল্লাহ, একক/অদ্বিতীয়আল্লাহ কারও মুখাপেক্ষী নন তাঁর কোন সন্তান নেই এবং তিনিও কারও সন্তান নন, এবং তাঁর সমতুল্য কেহই নেই

No comments

Powered by Blogger.